মধ্যযুগের ইসলামী সাহিত্য – তথ্যসম্ভার
মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের বাংলা পরীক্ষায় প্রদত্ত সিলেবাস অনুসারে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হল মধ্যযুগের ইসলামী সাহিত্য। এই বিষয় থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পরীক্ষার্থীদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় আমরা নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে মধ্যযুগের ইসলামী সাহিত্য – তথ্যসম্ভার শীর্ষক এই পোস্ট নিয়ে এলাম।
মধ্যযুগের ইসলামী সাহিত্য – নানা দিক দিয়ে পরিপূর্ণ। প্রণয়োপাখ্যান থেকে যুদ্ধকাব্য – নানা কবির সমারোহ। আমাদের আজকের মধ্যযুগের ইসলামী সাহিত্য – তথ্যসম্ভার আলোচনায় আমরা সেই সমস্ত রচিত সাহিত্যের খুঁটিনাটি তথ্য জেনে নেব। তথ্যগুলি মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। আমরা ইতিপূর্বে MSC পরীক্ষার্থীদের জন্য বেগম রোকেয়া, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ সহ নানা তথ্য পরিবেশন করেছি। আগ্রহীরা সংশ্লিষ্ট লিংকে গিয়ে তা পড়ে নিতে পারেন। এছাড়া আমাদের টার্গেট বাংলা ওয়েবসাইটেও পাবেন নানা তথ্য।
এই তথ্য-সমৃদ্ধ পিডিএফ ইতিমধ্যেই আমরা যারা আমাদের স্টাডি মেটেরিয়াল নিয়েছেন তাদের প্রদান করা হয়েছে। আমরা সর্বদাই পরীক্ষার্থীদের পাশে থেকে তাদের সহায়তা করতে প্রস্তুত।
মধ্যযুগের ইসলামী সাহিত্য – প্রণয়োপাখ্যানঃ
ক. মনোহর-মধুমালতী উপাখ্যান – প্রেমের আখ্যান। মনোহর হল কঙ্গিরা-রাজ সূর্যভান ও রানি কমলাসুন্দরীর সন্তান। অন্যদিকে মধুমালতী হল মহারস রাজ্যের রাজা বিক্রমঅভিরাম ও রানি রূপমঞ্জরীর কন্যা।
এই আখ্যানের কবি –
১. মুহম্মদ কবীরঃ কবি ছিলেন চট্টগ্রামের অধিবাসী। এই আখ্যান্যের তিনিই প্রাচীন কবি হিসেবে স্বীকৃত। কাব্য রচনাকাল আনুমানিক ১৫৮৩ খ্রিষ্টাব্দ। তবে কবির কাব্য রচনাকাল নিয়ে নানা সংশয় আছে।
২. সৈয়দ হামজাঃ হুগলির উদনা নিবাসী। কাব্যের নাম ‘কেচ্ছা মধুমালতী’। কাব্য রচনাকাল আনুমানিক ১৭৮৮-৮৯ খ্রিষ্টাব্দ।
৩. সাকের মাহমুদঃ রংপুর অঞ্চলের কবি। বাইশ বছর বয়সে ১৭৮১-৮২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কাব্য রচনা করেন।
৪. গোপীনাথ দাসঃ চট্টগ্রামের কবি। কাব্যের নাম ‘মালতী-মনোহর’। আনুমানিক ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর কাব্য রচিত হয়।
৫. জোবেদ আলীঃ বিশ শতকের প্রথম দিকে তিনি ‘মধুমালা কেচ্ছা’ নামে কাব্যটি রচনা করেন।
৬. নূর মহম্মদঃ খণ্ডিত রচনা। কাব্য নাম – ‘মদনকুমার মধুবালা’।
খ. লায়লী-মজনু উপাখ্যানঃ
এই আখ্যানের কবি –
১. দৌলত উজীর বাহরাম খানঃ কবির পূর্বপুরুষ হামিদ খান গৌড়ের সুলতান হোসেন শাহের প্রধান সচিব ছিলেন। কবি নিজাম শাহের দৌলত উজীর থাকাকালে ‘লায়লী-মজনু’ রচনা করেন। সময়কাল ১৫৪৩ খ্রিঃ থেকে ১৫৫৩ খ্রিষ্টাব্দ।
এছাড়া মুহম্মদ খাতের, জহিরুল হক, ওয়াজেদ আলী লায়লী-মজনু আখ্যান কাব্য রচনা করেছেন। অন্যদিকে গদ্যে এই বিষয়ে গ্রন্থ রচনা করেছেন – মহেশচন্দ্র মিত্র, শেখ ফজলুল করিম, শাহাদাৎ হোসেন, মীর্জা সোলতান আহমেদ, দ্বারকানাথ রায়। রাজকৃষ্ণ রায় এই বিষয় নিয়ে নাটক লিখেছেন।
মধ্যযুগের ইসলামী সাহিত্য – জঙ্গনামা বা যুদ্ধকাব্যঃ
এই আখ্যানের কবি –
১. গেয়াস খানঃ আঠারো শতকে চট্টগ্রামের কবি। তিনি আমীর হামজার দিগ্বিজয় বৃত্তান্ত রচনা করেন। কাব্যের নাম ‘হামজার বিজয়’।
২. আবদুন নবীঃ কবির কাব্যের নাম আমীর হামজা বা ‘হামজার বিজয়’। কাব্যটি ১৬৮৫ খ্রিষ্টাব্দে রচিত হয়।
৩. দৌলত উজীর বাহরাম খানঃ কারবালা যুদ্ধ বিষয়ে লেখা কবির কাব্যের নাম ‘ইমাম বিজয়’। কাব্যটি ১৫৪৩ খ্রিঃ – ১৫৫৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে লিখিত।
৪. মুহম্মদ খানঃ কারবালা যুদ্ধ বিষয়ে লেখা কবির ‘মক্তুলহোসেন’ এই বিষয়ক শ্রেষ্ঠ কাব্য। আকারেও বৃহৎ। জানা যায়, কবি তাঁর পীর সৈয়দ সুলতানের অভিপ্রায়ক্রমে কাব্যটি লেখেন। কাব্যের রচনা সমাপ্তিকাল ১৬৪৬ খ্রিষ্টাব্দ।
৫. কবি হামিদঃ ফারসি মক্তুলহোসেন অবলম্বনে ‘হোসেনসংগ্রাম’ রচনা করেন। যদিও কবি প্রদত্ত কাব্যনাম ‘সংগ্রাম হোসেন’। কবি তাঁর পীর শাহ তামাসের প্রেরণায় কাব্য রচনা করেন। এছাড়া হায়াত মামুদ, জাফর, আব্দুল আলিম, নজর আলী প্রমুখ কবি এই বিষয়ক কাব্য রচনা করেছেন।
ধর্মসাহিত্যঃ
১. শেখ পরাণঃ কবির রচিত কাব্য – ‘কায়দানী কেতাব’ ও ‘নূরনামা’। প্রথমটিতে ওজু, নামাজের ফরজ, গোসলের ফরজ, ওজুদের নাম ইত্যাদি বর্ণিত হয়েছে।
২. শেখ মুত্তালিবঃ শেখ পরাণের পুত্র। রচিত কাব্যের নাম ‘কায়দানী কেতাব’।
৩. আশরাফঃ রচিত গ্রন্থের নাম ‘কিফায়তুল মুসলেমিন’। গ্রন্থে বিভিন্ন নামাজের ফজলিয়ত বর্ণনা করা হয়েছে।
৪. ইউসুফ গদাঃ গ্রন্থের নাম ‘তোফাতুননেসায়েহ’। এই গ্রন্থে ফরজ, সুন্নত ও শিষ্ঠাচার সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে। গ্রন্থের রচনাকাল ১৩৯২-১৩৯৩ খ্রিষ্টাব্দ।
৫. আব্দুল হাকিমঃ গ্রন্থের নাম শাহাবউদ্দীননামা বা নসিয়তনামা। এই গ্রন্থে নামাজ, রোজা, নারীর ইজ্জত, বিদ্যা ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
৬. আফজল আলীঃ চট্টগ্রামের কবি। কবির পীর শাহ্ রুস্তমের আদেশে ‘নসিহতনামা’ নামে গ্রন্থটি রচনা করেন। কাব্যে তামাক সেবনের কুফল সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
চরিত সাহিত্যঃ
১. সৈয়দ সুলতানঃ চট্টগ্রাম নিবাসী এই কবিকে ‘আদ্যগুরু কল্পতরু’ বলে উল্লেখ করেছেন ‘আজরশাহ-সমনরোখ’ –এর কবি মুহম্মদ চুহর। কবির কাব্যের নাম ‘নবীবংশ’। কাব্য রচনার সূচনাকাল ১৫৮৪-১৫৮৬ খ্রিষ্টাব্দ।
২. শেখ চান্দঃ সপ্তদশ শতকের কবি। নবীবংশের আদলে ‘রসুল-নামা’ রচনা করেন। গ্রন্থটি হযরত মহম্মদের চরিতগ্রন্থ।
৩. শেখ মনোহরঃ অষ্টাদশ শতকের শেষদিকে কবি রচনা করেন ‘শমশের গাজীনামা’। এই গ্রন্থে নোয়াখালির শমশের গাজীর কীর্তি-কাহিনি বর্ণিত হয়েছে।
৪. মুহম্মদ উজির আলীঃ কবির লেখা গ্রন্থের নাম ‘নস্লে উসমান ইসলামাবাদ বা শাহনামা’। মুসলিমদের তৃতীয় খলিফা হযরত উসমানের বংশ পরম্পরা বিষয়ে লেখা।
৫. নুরুল্লাহঃ গ্রন্থের নাম ‘সিফৎনামা’। গ্রন্থে স্থানীয় ধনবান ও প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি যেমন জুমন, সফর আলি, আশরফ প্রমুখদের মাহাত্ম্য কথা বলা হয়েছে।
Yes