নীলদর্পণ নাটক – অজানা নানা তথ্য
বাংলা নাট্যসাহিত্যের এক উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটকটি। আমাদের এই আলোচনায় নীলদর্পণ নাটকের কাহিনি সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিবেশিত হয়েছে যা SLST, PSC সহ সকল প্রকার পরীক্ষার জন্য সহায়ক হবে। ‘নীলদর্পণ’ নাটক ও দীনবন্ধু মিত্র সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন পেতে এখানে ক্লিক করুন।
নীলদর্পণ পরিচয়
পঞ্চাঙ্কের ‘নীলদর্পণ’ দীনবন্ধু মিত্রের সর্বাধিক জনশ্রুত নাটক। ১২৬৭ বঙ্গাব্দে ঢাকা থেকে নাটকটি প্রকাশিত হয়। আখ্যাপত্রে লেখা ছিল ‘নীলদর্পনং নাটকং নীলকর-বিষধর-দংশন কাতর-প্রজানিকর ক্ষেমংকরেন কেনচিৎ পথিকেনাভি প্রণীতং’। গ্রন্থের ‘ভূমিকা’ অংশে কস্যচিৎ পথিকস্য নামে লেখা হয়েছে ‘নীলকরনিকরে নীল-দর্পণ অর্পণ করিলাম।’ এই নাটকে নীলকর সাহেবদের অত্যাচারে একটি পরিবারের চরম বিপর্যয়ের কথা বাস্তবসম্মতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। বঙ্কিমচন্দ্রের মতে, এই ‘নীলদর্পণে’র নাট্যকাহিনির পশ্চাতে আছে নদীয়ার গুয়াতেলি গ্রামের মিত্র পরিবারের কাহিনি।
অনুবাদ
নাটকটি কলকাতা থেকে ‘Nil Durpun or the Indigo Planting Mirror’ নামে A Native দ্বারা ইংরেজিতে অনূদিত হয়।
কাহিনি সংক্ষেপ
স্বরপুরের সম্পন্ন গৃহস্থ গোলোক বসু যার দুই পুত্র – নবীনমাধব ও বিন্দুমাধব। এদেরই অনুগত অবস্থা সম্পন্ন চাষি সাধুচরণ। নীল চাষ নিয়ে সাহেবদের সঙ্গে গোলোক বসুর বিবাদ। অত্যাচারিত রায়তদের পক্ষাবলম্বন করে নবীনমাধব। ফলে নীলকর সাহেবদের সঙ্গে বিরোধ বাড়তে থাকে। নীলকর সাহেবরা ষড়যন্ত্র করে গোলোক বসুকে কারারুদ্ধ করে। অপমানে গোলোক কয়েদখানায় আত্মহত্যা করে। পুকুরপাড়ে নীলচাষ বন্ধ করতে গিয়ে নবীনমাধবের সঙ্গে সাহেবদের বিবাদ হয় এবং লাঠির আঘাতে সে অচৈতন্য হয়, পরে তার মৃত্যু হয়। এর আগে সাধুচরণের গর্ভিণী কন্যা ক্ষেত্রমণিকে লাঠিয়ালেরা রোগ সাহেবের কুঠিতে নিয়ে যায়। রোগ সাহেব ক্ষেত্রমণির ধর্ষণের চেষ্টা করলে সে তার হাত মুখ নখ দিয়ে পালটা আক্রমণ করে। ক্রুদ্ধ রোগ সাহেব ক্ষেত্রমণির পেটে ঘুসি মারে। এক চাষি তোরাপকে সঙ্গে নিয়ে নবীনমাধব ক্ষেত্রমণিকে সেখান থেকে উদ্ধার করে। কিন্তু বাড়িতে আসার পর ক্ষেত্রমণি প্রাণত্যাগ করে। ওদিকে নবীনের মা মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
সংলাপ
দীনবন্ধু মিত্র এই নাটকে উচ্চ শ্রেণির চরিত্রের মুখে সাধুভাষার সংলাপ ব্যবহার করলেও নিম্নশ্রেণির চরিত্রগুলির মুখে দিয়েছেন গ্রাম্য কথ্য ভাষা। মূলত নদীয়া, যশোহর ও খুলনা অঞ্চলের কৃষক সমাজের ভাষাই ব্যবহার করা হয়েছে। নাটকে গ্রাম্যতার সঙ্গে মিশেছে কৌতুক রস। কেউ কেউ ভাষার শুচিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্র বলেছেন শুচিতার দিকে অধিক নজর দিলে ‘আমরা ছেঁড়া তোরাপ, কাটা আদুরী, ভাঙা নিমচাঁদ পাইতাম।’ নাটকে অনেক মৃত্যুর ঘটনা আছে। নাটকটি আদ্যপান্ত দুঃখজনক ঘটনায় পূর্ণ। মোহিতলাল মজুমদার নাটকটিকে মেলোড্রামা বলে উল্লেখ করেছেন।
শেষ কথা
‘নীলদর্পণ’ উদ্দেশ্যমূলক নাটক। সমকালীন নীলকর সাহেবদের নীলচাষীদের প্রতি অত্যাচারের বর্ণনাই এই নাটকের উদ্দেশ্য এবং নাট্যকার তাতে সফল এ কথা বলাই বাহুল্য। হেরিয়েট স্টো রচিত ‘আঙ্কল টমস্ কেবিন’ যেমন দাসত্ব প্রথার বিরুদ্ধে জনমত গঠনে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল তেমনি দীনবন্ধুর ‘নীলদর্পণ’ নীলকর সাহেবদের অত্যাচার থেকে মুক্তির দিশা দেখিয়েছিল। বঙ্কিমচন্দ্র তাই বলেছেন, ‘নীলদর্পণ বাঙলার Uncle Tom’s Cabin’।