Tutorials

ভারতের নানা শিক্ষা কমিশন

আমাদের দেশে শিক্ষাব্যবস্থার নানা উন্নতির লক্ষ্যে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছে। শিক্ষার সার্বিক উন্নতিতে সেইসব শিক্ষা কমিশন তাদের নানা সুপারিশ প্রদান করেছে আমাদের এই আলোচনায় ভারতে গঠিত নানা শিক্ষা কমিশন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত অথচ নিটোল আলোকপাত করা হয়েছে।

১. রাধাকৃষ্ণান কমিশন

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা লাভের পর আমাদের দেশে যে সমস্ত শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছে তার মধ্যে প্রথমেই উল্লেখযোগ্য হল রাধাকৃষ্ণান কমিশন। স্বাধীনতা অর্জনের পর নতুন দেশ কাল তথা সমাজের পরিবর্তিত পটভূমিতে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার ও প্রয়োগের উদ্দেশ্য সাধনে জন্ম হয় এই শিক্ষা কমিশনের। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ৪ ঠা নভেম্বর ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণানের সভাপতিত্বে রাধাকৃষ্ণান কমিশন গঠিত হয়। এর অন্য পরিচিত নাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে গঠিত হলেও ভারত সরকারের কাছে কমিশন তাদের সুপারিশ পেশ করে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে।

কমিশনের সদস্যবৃন্দ হলেন ড. রাধাকৃষ্ণান, ড. জাকির হোসেন, ড. তারাচাঁদ, ড. মেঘনাদ সাহা, ড. মুদালিয়র, ড. নির্মলকুমার, ড. মর্গ্যান, ড. জেমস ডাফ, ড. টিগার্ট।

লক্ষ্য – শিক্ষার মানোন্নয়ন, পাঠক্রম, শিক্ষক, নারীশিক্ষা

কমিশনের সুপারিশ – পরিকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রয়োজন ও চাহিদা অনুসারে পাঠক্রমের রূপায়ন, শিক্ষার মানোন্নয়ন, পরীক্ষা ব্যবস্থায় সংস্কার, শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে আঞ্চলিক ভাষায় গুরুত্ব, নারীশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি, গ্রামীণ শিক্ষা উন্নতিতে বিশেষ চিন্তাভাবনা।

২. মুদালিয়র কমিশন

রাধাকৃষ্ণান কমিশনের পর ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে মুদালিয়র কমিশন বা মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়। মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. লক্ষ্মণস্বামী মুদালিয়র ছিলেন এই কমিশনের সভাপতি। কমিশনের সদস্য সম্পাদক ছিলেন – শ্রী অনাথনাথ বসু। এই কমিশনের অন্যান্য সদস্যরা হলেন –
৬ জন ভারতীয় – হংস মেহেতা, শ্রী তারপোরওয়ালা, ড. শ্রীমালী, এম টি ব্যাস, কে জি সংদিয়ান, অনাথনাথ বসু
২ জন বিদেশি শিক্ষাবিদ – জন ক্রিস্টি, কে আর উইলিয়ামস

প্রচলিত মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পর্কে অনুসন্ধান ও উপযোগিতা বিচার তথা মাধ্যমিক শিক্ষার সংস্কার করাই ছিল মুদালিয়র কমিশনের মূল লক্ষ্য। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাস থেকে কমিশন কাজ শুরু করে এবং তার রিপোর্ট পেশ করেন – ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে। কমিশনের পেশ করা রিপোর্ট মোট ৩১১ পৃষ্ঠার ছিল।

সুপারিশ – শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে বলা হয়েছিল যুবসমাজের চরিত্রগঠন, ব্যক্তিত্বের বিকাশ, সতের বছর বয়স পর্যন্ত পূর্ণাংগ মাধ্যমিক শিক্ষা, মাধ্যমিক শিক্ষার পরিকাঠামোগত উন্নয়ন, আবশ্যিক পাঠের পাশাপাশি শিক্ষার্থীর ইচ্ছানুসারে ঐচ্ছিক পাঠের কথা বলা হয়। পরীক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার, কারিগরি শিক্ষা, শারীরশিক্ষা, নারীশিক্ষার উপর জোর দেওয়া হয়।

৩. কোঠারি কমিশন

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, সাম্প্রদায়িক দাংগা, দেশবিভাগ এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সংকটের পটভূমিতে ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই গঠিত হয় কোঠারি কমিশন। এই কমিশনের অন্য নাম ভারতীয় শিক্ষা কমিশন। কোঠারি কমিশনের মোট সদস্য সংখ্যা ছিল ১৭ জন। এর মধ্যে ১১ জন ভারতীয় এবং ৬ জন বিদেশি। কমিশনের সভাপতি ছিলেন – অধ্যাপক ড. ডি. এস কোঠারি। কমিশনের সদস্য সম্পাদক ছিলেন – বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জে পি নায়েক।

কমিশন ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের ২ অক্টোবর কাজ শুরু করে তাদের রিপোর্ট পেশ করে ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে। কমিশনের কাজের সময়কাল ২১ মাস। সে সময় কমিশনের রিপোর্ট ছিল মোট যত ৬৯২ পৃষ্ঠার। কমিশনের রিপোর্টে প্রাধান্য পেয়েছে – মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, উচ্চশিক্ষা এবং বয়স্ক শিক্ষা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

TO GET LATEST UPDATES AND TUTORIALS FOR FREE..

X