Tutorialsপ্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য

ধর্মমঙ্গল কাব্যের কাহিনি – সম্পূর্ণ জানুন

মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের ধারায় মঙ্গলকাব্য সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। এই মঙ্গলকাব্যের ধারায় ধর্মমঙ্গল কাব্য একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। আমরা এর আগে চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের কাহিনি পরিবেশন করেছি। আমাদের আজকের এই আলোচনায় ক্রমানুসারে ধর্মমঙ্গল কাব্যের কাহিনি সম্পূর্ণ উপস্থাপিত হয়েছে।

ধর্মমঙ্গল কাব্যের কাহিনি

ধর্মমঙ্গল কাব্যের দুটি কাহিনি – (১) রাজা হরিশচন্দ্রের কাহিনি ও (২) লাউসেনের কাহিনি। দুটি কাহিনির মধ্যে প্রথমটিকে ধর্মের সবচেয়ে আদিম কাহিনি বলে মনে করা হয়। আমরা দুটি কাহিনিই পাঠক পাঠিকার উদ্দেশ্যে এখানে তুলে ধরলাম। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের নানা তথ্য ও মক টেস্ট পেতে আমাদের ইউটিউব চ্যানেল প্রয়াস সাবস্ক্রাইব করুন।


রাজা হরিশচন্দ্রের কাহিনি

রাজা হরিশচন্দ্র ও তাঁর স্ত্রী রানি মদনা ছিলেন নিঃসন্তান। মনের দুঃখে স্বামী ও স্ত্রী ঘুরতে ঘুরতে বল্লুকা বা বল্লুক নদীর তীরে উপস্থিত হলেন। তারা দেখতে পেলেন, ভক্তেরা সেখানে ধর্মের পূজা করছে। তারাও সন্তান লাভের আশা নিয়ে ধর্মের পূজা শুরু করলেন এবং পুত্র সন্তান লাভের বর লাভ করলেন। তবে শর্ত ছিল এই যে, ওই পুত্রকে যথাকালে ধর্মের কাছে বলি দিতে হবে। সন্তানের মুখ দর্শনের আশায় রাজা ও রানি রাজি হয়ে যান। যথাসময়ে পুত্র জন্মায় এবং বড় হয়। তার নাম রাখা হয় লুইচন্দ্র বা লুইধর। কিন্তু রাজা ও রানি তাদের প্রতিজ্ঞার কথা ভুলে যান।

একদিন ধর্মঠাকুর ব্রাহ্মণের বেশ ধারণ করে তাদের গৃহে এসে উপস্থিত হন। একাদশীর ব্রত পার করার জন্য লুইচন্দ্রের মাংস আহারের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ব্রাহ্মণের সেবায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ রাজা ও রানি লুইধরকে হত্যা করে তার মাংস ব্রাহ্মণকে আহার করতে দেন। তাদের নিষ্ঠা দেখে ধর্মঠাকুর সন্তুষ্ট হয়ে নিজ মূর্তি ধারণ করে লুইচন্দ্রের জীবন ফিরিয়ে দিলেন। তারপর রাজা মহাসমারোহে ধর্মের পূজা শুরু করেন।

লাউসেনের কাহিনি

এই দ্বিতীয় কাহিনিটিই সর্বাধিক জনপ্রিয় ও উল্লেখযোগ্য কাহিনির মর্যাদা লাভ করেছে। গৌড়েশ্বরের সামন্ত রাজা কর্ণসেনের ছয় ছেলে অপর এক পরাক্রমশালী সামন্তর আক্রমণে নিহত হয়। এমতাবস্থায় কর্ণসেন পুত্রশোকে কাতর হয়ে পড়েন। তখন গৌড়েশ্বর তার প্রিয় সামন্তকে পুনরায় গৃহবাসী করার জন্য নিজ শ্যালিকা রঞ্জাবতীর সঙ্গে বৃদ্ধ কর্ণসেনের বিবাহ দেন। এদিকে এই বিবাহের সংবাদে রঞ্জাবতীর ভাই মহামদ খুব চটে গিয়ে কর্ণসেনকে ‘আঁটকুড়ো’ বলে উপহাস করেন। স্বামীর অপমানে অভিমানী হয়ে রঞ্জাবতী ধর্মঠাকুরের কাছে শূলে ভর দিয়ে প্রাণত্যাগের মতো কঠিন কৃচ্ছ্রসাধন করতে গেল। অবশেষে ধর্মঠাকুর আবির্ভূত হয়ে তাকে পুত্রলাভের বর দান করেন। ধর্মের কৃপায় সেই পুত্র হলে তার নাম হয় লাউসেন। মাতুল মহামদ তাকে শিশুকালেই বিনাশের নানা চেষ্টা করতে লাগল।

কিন্তু ধর্মের কৃপায় লাউসেন প্রতিবার রক্ষা পায়। ক্রমে লাউসেন হয়ে উঠে অসাধারণ বীর। তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।  জন্তু জানোয়ার মেরে এবং ব্যাপিকা রমণীদের কবল থেকে নিজেকে রক্ষা করে সে সাহস ও চারিত্রিক দৃঢ়তার পরিচয় দেয়। মহামদের কুপরামর্শে গৌড়েশ্বর তাকে বিভিন্ন কঠিন কাজের নির্দেশ দিতে থাকেন। এবং প্রতিবার লাউসেন সেই নির্দেশ বীরত্বের সঙ্গে পালন করে। কালক্রমে লাউসেন প্রতিবেশি রাজাদের হারিয়ে তাদের কন্যাকে বিবাহ করে। লাউসেনের কোনো রকম ক্ষতি করতে না পেরে মহামদ বৃদ্ধ গৌড়েশ্বরকে বলেন লাউসেনকে পশ্চিমে সূর্যোদয় দেখাতে। ধর্মের কৃপায় সেই অসম্ভবকেও লাউসেন সম্ভব করে দেখান। ফলে চারিদিকে লাউসেনের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।

দুষ্কর্মের ফল স্বরূপ মহামদের কুষ্ঠরোগ হয় ও ধর্মের নিকট লাউসেনের অনুরোধে সুস্থ হন। এইভাবে ধর্মের মহিমা ছড়িয়ে পড়ে। লাউসেন পরম গৌরবে রাজত্ব করতে থাকেন। তার পরে পুত্র চিত্রসেনের হাতে রাজ্যভার তুলে দিয়ে স্বর্গযাত্রা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

TO GET LATEST UPDATES AND TUTORIALS FOR FREE..

X